জগন্নাথ পুরী মন্দিরের রান্নাঘরকে বলা হয় পৃথিবীর অদ্ভুত ও বড় রান্নাঘর।
এই রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না । উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয় আর তার নিচেই সেবকরা এসেই রান্না কার্য সম্পন্ন করে ।
এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পায় । আর এমনিতে পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রসাদ পেয়ে থাকে ।
এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত । যাদের দুটি ভাগ ২৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এ দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে । এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি চুলা যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরও বেশি ।
চুলাগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় নয়টি পাত্র থাকে । শুধুমাত্র এ পাত্রগুলোর নিচে অবস্থিত আগুনের মাধ্যমেই উপরের পাত্র থেকে শুরু করে শেষে নিচের পাত্রটির রান্না অদ্ভুদ ভাবে সম্পন্ন হয় । এই রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার সেবক । তার মধ্যে ৫০০ সেবক রয়েছে কেবলমাত্র চুলাতে রান্না করার জন্য সহায়ককারী হিসেবে ।
এখানে কোন পুরাতন পাত্রে রান্না করা হয় না, প্রতিদিন নতুন নতুন পাত্রে রান্না করা হয়, তাই একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়, আরেক দল তা সরবরাহ করে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। আরেকদল পাত্রগুলো ধৌত করে, আরেকদল পাত্রে জলভর্তি করে চুলাতে নিয়ে যায় |
রান্না করার জন্য এখানে গঙ্গা আর সরস্বতী নদী (এটা একটা রূপক, পাথর বাঁধানো জলের দুটি নালী, যা সারা দিন নদীর ন্যায় ক্রমাগত জল পরিবহন করে) রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যা বাহির থেকে দেখা যায় না যা সত্যিই অদ্ভুত !!!!
কেউ কেউ সব্জি ধৌত করছে আর কেউ কেউ সব্জি কাটছে আর কেউ মসলা তৈরি করছে ।
রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকে তাদের বয়স যখন ১২ বছর হয় তখন থেকে তারা ট্রেনিং এ নেমে পড়ে এভাবে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবা সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকে ।
এই রান্নাঘরে ১০০টির উপর আইটেম রান্না করা হয় যা দুটি ভাগে বিভক্ত । এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয় । পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলো যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি ।অপরদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কিট, মিষ্টান্ন আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা ।
জগন্নাথের জন্য যেসমস্ত ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয় সেগুলো দু হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয় । অন্য কোন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না ।
জগন্নাথ দেব আর লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় ধন্য এই রান্না ঘর । তাইতো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয় ।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘর কেন অদ্ভুদ ?
Reviewed by Admin Amit
on
February 27, 2017
Rating:
No comments: