মালদহের এই কালি মন্দিরে একসাথে পূজা করে হিন্দু-মুসলিমরা


 


 এক সময় ভয়াবহ কলেরা রোগ থেকে গোটা এলাকাকে রক্ষা করেছিলেন মা কালী৷ সেই বিশ্বাসে ভর করেই আজও কালীর আরাধনা করছে মথুরাপুর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় বিগত ৩৫০ বছর আগে গোটা মানিকচক জুড়ে কলেরা রোগের মহামারী দেখা দিয়েছিল।চারিদিকে শুধু প্রাণহীন দেহের ছড়াছড়ি৷ বাঁচার উপায় খুঁজে পাচ্ছিলনা মানিকচকবাসী। সেসময় মথুরাপুর অঞ্চলের কাহার পাড়াই এক অজ্ঞাত সাধুবাবা বটতলায় ধ্যান করতেন।তখন ওই সাধু এলাকাবাসীকে কলেরা মহামারী থেকে বাঁচতে মা রক্ষার আরাধনার পরামর্শ দেন ও পুজো করার নিয়ম বলেন। তারপর থেকে মথুরাপুরবাসী যৌথভাবে রক্ষাকালীর পুজো আরম্ভ করে।এলাকাবাসীর বিশ্বাস এই পুজো শুরুর পর থেকে আর এলাকায় কলেরার থাবা থেকে মুক্ত হয়েছে।
পুজো পরিচালন কমিটি আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর শীতের শুরুতে মায়ের পুজোর আয়োজন করা হয়।বর্তমানে মায়ের বিশাল মন্দির স্থাপিত রয়েছে।
তবে এই পুজোয় বিশেষ রীতি-রেওয়াজ রয়েছে।মায়ের প্রতিমার উচ্চতা তিন ফুট।পুজোর দিন সকালে সূর্যোদয়ের পর মায়ের প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের আগে বানানো শেষ করা হয়।কাটা অবস্থাতেই মায়ের পুজো হয়।পুজো শুরুর সময় থেকে মায়ের প্রতিমা বানিয়ে আসছে স্থানীয় বসাক পরিবারের সদস্যরা।বসাক পরিবারের সদস্য জিতেন বসাক বর্তমানে প্রতিমা বানাচ্ছে।তিনি কর্মসূত্রে কলকাতায় সহপরিবার বসবাস করেন।কিন্তু,মায়ের প্রতিমা বানানোর জন্য সমস্ত কাজ ফেলে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসে।অর্থের জন্য নয়,মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।আজ সন্ধ্যা থেকে মায়ের পুজো আরম্ভ হবে,যা সারারাত ব্যাপী চলবে এবং ভোরের কাক ডাকার আগেই মায়ের প্রতিমা পাশের ফুলাহার নদীতে নিরঞ্জন করা হবে।
পুজোর সারারাত বলি প্রথা চলে।
প্রায় প্রতিবছর ১৫০০ বেশি পাঁঠা বলি হয়।তবে পাঁঠাবলির বিশেষ নিয়ম রয়েছে, প্রতি মিনিটে পাঁচটি বলি হয়।তবে পিছিয়ে নেই মুসলিম সম্প্রদায়।মুসলিম সম্প্রদাযের মানুষ নিজেদের মানত শোধ করতে পাঁঠাবলি ও দান দেন,তবে গুপ্ত ভাবে।

এক রাতের এই পুজোয় সারা মানিকচকবাসী মত্ত থাকেন।মায়ের মন্দিরের পাশে আম বাগানে বিশাল জাকজমক মেলা বসে।মায়ের দর্শনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এক রাতে জমায়েত হয় মন্দির চত্বরে।পুজো কমিটির মতে মুসলিম সম্প্রদাযের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এই পুজোয় তাই শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালনা করতে অনেকটা সুবিধে হয়।
পুজো কমিটির এক সদস্য সন্তোষ মন্ডল জানান,এত বড় পুজোকে শান্তিপূর্ণ সম্পন্ন করতে আমাদের পুলিশ করা নজরদারি থাকছে।মহিলাদের কথা মাথায় রেখে মেলা প্রাঙ্গণে চারটি পুলিশ ক্যাম্প ও মহিলা পুলিশ পাহারা থাকছে,পৃথক বসার,মায়ের দর্শন ও পুজোর বেবস্থা থাকছে মহিলাদের জন্য।বয়স্ক মানুষদের জন্য মায়ের মন্দিরের পাশে পর্দার মধ্যে মায়ের দর্শন করতে পারবে।
মায়ের প্রচুর অলংকার রয়েছে,যা ভক্তদের দানের।মালদহবাসীদের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্য বিহার,ঝাড়খন্ড, দিল্লি,মুম্বই সহ প্রতিবেশী দেশ নেপাল বাংলাদেশ থেকে  মায়ের দর্শনে ভির জমায়।সেই সময় মায়ের মেলা মিলনের উৎসে পরিণত হয়।

মালদহের এই কালি মন্দিরে একসাথে পূজা করে হিন্দু-মুসলিমরা মালদহের এই কালি মন্দিরে একসাথে পূজা করে হিন্দু-মুসলিমরা Reviewed by Admin Amit on May 09, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.