মাটির নীচে গুপ্তধন আগলে বসে তিন মাথাওলা কালী



এ যেন সেই গুপ্তধনের মতো। অনেকটা তেমনই হাওড়া শিবপুরের অপ্রকাশ মুখার্জি লেনের কালী মন্দির। মাটির তলায় রয়েছে আসল ধাতুর মূর্তি। মাটির উপরে সিমেন্টের মূর্তি। সে মূর্তিতেও রয়েছে অভিনবত্ব। গত প্রায় ১০০ বছর সমত ধরে যেন কোনও এক জহুরীর জওহর নিয়ে মাটির নীচে অবস্থান করছেন জহুরী কালী।
মূর্তির সামনে রয়েছে একটি বড় ডিম্বাকার অংশ। তার সামনে ঘট। সেই ঘটের তলাতেই আসল মূর্তিটি স্থাপন করা রয়েছে। এই মন্দিরটি খুব ছোট আকারে চালু করেছিলেন তঙ্কুরাম দেবশর্মা নামে এক সাধক। তখন ওই জায়গাটি জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। অনেক পরে নতুন মন্দিরটি তৈরি হয়। ১৯৭০ সালে স্বপ্নাদেশে মায়ের রূপ প্রত্যক্ষ করে মূর্তি নির্মাণ করা হয় মাটির উপরে। পাশাপাশি তিনটি মূর্তির সহবস্থান। অদ্ভুত এক রূপ।
কালুদা নামে ওই জনৈকের সঙ্গ দিয়েছিলেন আরও বেশ কিছু যুবক। ছিলেন মায়ের বর্তমান মায়ের সেবায়েত সুনীল কুমার গাঙ্গুলীও। সেই শুরু। তারপর থেকে শুরু নিত্য পূজা হয়। যে কোন ফল ও ফুল দিয়ে জহুরা কালীর নিত্য পুজো হয় বলে সেবায়েতরা জানান। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় মহাধুমধামের সাথে জহুরা কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে মন্দিরে দেবীর বিশেষ পূজা সহ কল্পতরু উৎসব পালিত হয়। পূজা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত নরনারায়ণ সেবায় প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে।
এই মূর্তির আসল রূপের দেখা মেলে মালদহে। জনশ্রুতি মালদহ জহুরী তলা গ্রামের মা জহুরা। রাজাদের আমলে এ অঞ্চলটি ছিল ঘন বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। বিহার ও উত্তর প্রদেশে ডাকাতের দল বিভিন্ন ধনরত্ন লুন্ঠন করে এই অঞ্চলে মাটির নীচে লুকিয়ে রাখতো। ঐতিহাসিকদের মতে এই ডাকাতরা ধনরত্নের উপর একটি চন্ডী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল, এবং অত্যন্ত নিষ্ঠা ভরে তার পূজা ও আরাধনা করত। মনে করা হয়, ধনরত্ন হিন্দি শব্দ ‘জওহর’ এবং তার থেকেই দেবী চন্ডী জহুরা বা জহরা নামে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। জনশ্রুতি, সেই একই কারণে জহুরা কালীর মন্দির তৈরি হয় হাওড়ার এই অঞ্চলে। এই পূজোয় মানকচু ভোগ দিতে হয়। বলি দেওয়া হয় ল্যাটা মাছ।
মাটির নীচে গুপ্তধন আগলে বসে তিন মাথাওলা কালী মাটির নীচে গুপ্তধন আগলে বসে তিন মাথাওলা কালী Reviewed by Admin Amit on April 21, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.