বড়, মেজ, সেজ ও ছোট মা।
কালী ঠাকুরের চার বোনের কথা শোনা যায় এই বাংলারই এক গ্রামে। বাংলাজুড়ে রয়েছে কালীর নানা মাহাত্ম্য কাহিনি। তবে এই কাহিনিটা একেবারে অন্যরকম। এই কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি গ্রামের গল্প কথা। যে গ্রামে কালির চার বোন বাস করেন।
বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা। বর্ধমানের মেমারির আমাদপুরে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নামে দেবীর পুজো হয়ে আসছে। এই চার বোন ছাড়াও গোটা গ্রামে রয়েছে কমবেশি ২০০টি কালী। সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী, ক্ষ্যাপা মা, আনন্দময়ী মা ইত্যাদি ভিন্ন নামে মা কালী এখানে পূজিত হন। এই জন্য এই গ্রাম মানুষের কাছে কালী গ্রাম নামেই পরিচিত।শুধু কালী নয়, এখানে ভৈরবের পুজোও হয়। সঠিক ইতিহাসটা কী? সেটা এলাকার কেউই জানেন না। তবে লোকমুখে নানা কাহিনি শোনা যায়। আর সেই সব নিয়ে বাংলার এই গ্রামে দুর্গা নয়, কালীপুজোই আসল।
বর্ধমানের আমাদপুর এক প্রাচীন জনপথ। কথিত আছে, পূর্বে এখান দিয়েই প্রবাহিত ছিল বেহুলা নদী। বর্তমানে তা মজে গিয়ে খালের আকার নিয়েছে। এক সময়ে বাণিজ্য তরী নাকি যাতায়াত করত এখান দিয়ে। সেই সময়ে বণিকদের দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতে হত। সেই সময়ে আমাদপুরে বেহুলা নদীর ধারে ছিল মহাশ্মশান। সেখানে এক সাধু থাকতেন। সেই সাধু শ্মশানে কালীসাধনা করতেন। বণিকরা দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে এই শ্মশানে কালী মায়ের পুজো দিতেন। শোনা যায়, এর পর থেকেই তাঁরা দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেন। তখন থেকেই এই দেবীর প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পরে দিকে দিকে। তখন থেকেই বেহুলা নদীর তীরে নানা রূপে কালীর আরাধনা শুরু হয়।
গ্রামে ঢুকলে প্রথমেই প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার বড় মা-এর দর্শন পাওয়া যাবে। আরও কিছুটা এগোলেই রয়েছেন প্রায় ১৭ ফুট উচ্চতার মেজ মা। তার আশপাশে রয়েছে সেজ মা ও ছোট মা-এর মন্দির।
দূরদূরান্ত থেকে মানুষ কালী পুজোর দিনে হাজির হন এই গ্রামে। বিসর্জনের সময়ে বড়, মেজ, সেজ আর ছোটমাকে চতুর্দোলায় করে শোভাযাত্রা বের হয়। সারা রাত গোটা গ্রাম ঘোরানোর পরে ভোর বেলায় বিসর্জন হয়। এই দেবীরা ছাড়াও আরও গ্রামে যত দেবী রয়েছেন, সকলকেই একসঙ্গে চতুর্দোলা করে একটির পর আর একটি— এইভাবে লাইন দিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। আশেপাশের জেলা থেকে মানুষজন এসে ভিড় জমান।
কালী ঠাকুরেরা নাকি চার বোন, থাকেন বর্ধমানের এক গ্রামে
Reviewed by Admin Amit
on
March 05, 2017
Rating:
No comments: