হিন্দুধর্মে পবিত্র অক্ষয়বট সম্পর্কে কিছু অজানা কথা


 


সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বড় বট গাছকে অক্ষয় বট নামে অভিহিত করে থাকি। আমাদের লৌকিক সংস্কৃতিতে বড় বড় গাছের পূজা করার রীতি লক্ষ্য করা যায়। ভারতবর্ষে বটগাছ ছাড়াও তুলসি, অশ্বত্থ গাছের পূজার চল আছে। আজ তুলে ধরবো অক্ষয় বট সম্বন্ধে কিছু কথা-
‘অক্ষয়বট’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষয় পরমায়ু, প্রাচীন-ব্যক্তি, অতি বয়স্ক জ্ঞানী ব্যক্তি প্রভৃতি। পুরাণে বর্ণিত অক্ষয়বট হতে শব্দটির উৎপত্তি। প্রয়াগ, ভুবনেশ্বর প্রভৃতি তীর্থস্থানে এক একটি বটবৃক্ষ আছে। প্রবাদ আছে এই সকল বটগাছের মৃত্যু নেই। কতকাল থেকে চলে আসছে, তবু ঝড়ে একটি শাখা ভাঙ্গে না, রৌদে একটা পাতা শুকায় না। ভক্তিপূৰ্ব্বক এই সকল বৃক্ষে জলসেচন করলে অক্ষয়ফল লাভ হয়। প্রয়াগের অক্ষয় বট এখন কেল্লার ভিতর পড়েছে। ছায়াতে থাকার কারনে তার বৃদ্ধি নেই, গাছটা নিতান্ত ক্ষুদ্র।
জগন্নাথপুরীতেও অক্ষয় বটের বিবরণ পাওয়া যায়—
সুধন্য অক্ষয় বট, সুধন্য সিন্ধুর তট,
ধন্য নীলাচল তপোবন। (মানসিংহ)।
প্রয়াগের অক্ষয়বট অনেক প্রাচীন বৃক্ষ। আগে ঐ গাছ খোলা স্থানে ছিল; দিনে দিনে চারপাশে মাটি জমেছে, সুতরাং গাছটিও নিচে পড়েছে। এলাহাবাদ দুর্গের ভিতর এলেন্‌বরা বারিকের ঠিক পূৰ্ব্বে পুরাতন মন্দির, মন্দিরের পাশেই অক্ষয়বট। চীন পরিব্রাজক হিয়াং শাং ঐ পুরাতন মন্দিরের উল্লেখ করে গেছেন। আকবর বাদশার সময় হিন্দুরা এই বৃক্ষের মূল হতে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণত্যাগ করতেন। তীর্থযাত্রীরা প্রয়াগে গেলে এই পুণ্যতরু দেখতে যান। অক্ষরবটের পূজা করলে অক্ষয় ফল লাভ হয়।
পূৰ্ব্বে গয়াক্ষেত্রেও একটি অক্ষয়বট ছিল। পাণ্ডবেরা বনবাসে গিয়ে লোমশমুনির উপদেশানুসারে সেই বৃক্ষ দর্শন করেছিলেন।
রামায়নে দশরথের প্রেতাত্মা সীতাদেবীর হাত থেকে চালের অভাবে বালুকার পিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন। এর সাক্ষী ছিল ফল্গুনদী, তুলসী গাছ ও অক্ষয়বট। রামচন্দ্র ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে যখন ফল্গুনদী ও তুলসী গাছকে প্রশ্ন করেন, তখন তারা মিথ্যা কথা বলে। ফলে সীতাদেবী তাদের অভিশাপ দেন। কিন্তু অক্ষয়বট সত্য কথা বলায়, সীতাদেবী তাকে আশীর্বাদ করেন। কুরুক্ষেত্রের প্রাঙ্গনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনকে গীতা দানের সাক্ষী আজও হয়ে আছে সেখানে অক্ষয় বট।
সনাতন হিন্দু ধর্মমতে তীর্থের বৃহৎ বটগাছে জল দিলে এবং পূজা করলে মনষ্কামনা পূর্ণ হয়। প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে বৈতরণী নদীর তীরে অক্ষয় বটের উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে একটি অক্ষয় বট আছে। সীতাকুণ্ডের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শিবচতুদরর্শী মেলায় নানা ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে অক্ষয়বটেরও পূজা করা হয়।
নিরঞ্জন নদীর পাড়ের যেখানে বুদ্ধ (গৌতম) বোধিত্ব লাভ করেছিলেন, সেখানে প্রথম বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন সম্রাট অশোক। এই মন্দিরের পাশে একটি অক্ষয়বট আছে। হিন্দু তীর্থক্ষেত্রে একটি অক্ষয়বট আছে।
বাংলাদেশে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ব্যাসকুণ্ডের পশ্চিম পাড়ে এবং ভৈরব মন্দিরের পাশে একটি বিশাল বটবৃক্ষ রয়েছে। এটি ভক্তদের কাছে অক্ষয়বট নামে পরিচিত। পুরাণমতে, গয় ছিলেন একজন ধার্মিক রাজা। তাঁর পিতার নাম ছিল অমূর্তরয়। তিনি যজ্ঞ-আহুতির অবশিষ্টাংশ আহার করে শতবর্ষ উপাসনা করেন। এতে ভারতবর্ষের তিন জন দেবতার মধ্যে অগ্রগণ্য অগ্নিদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর প্রার্থনামতে তাঁকে বেদ অধ্যয়ন করার অধিকার দেন। অগ্নির বরে ইনি পৃথিবীর উপর আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। এরপর তিনি বিশাল এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞকালে একটি বটবৃক্ষ চিরজীবী হয়। এই চিরজীরী বট বৃক্ষটি অক্ষয়বট নামে পরিচিত। মূলত এ কাহিনি থেকে বাংলা শব্দ ‘অক্ষয়বট’-এর উৎপত্তি। বাংলায় এখন ‘অক্ষয়বট’ বলতে কোনও বটবৃক্ষ বোঝায় না। দীর্ঘজীবী, প্রাচীন ব্যক্তি প্রভৃতি বোঝায়।
হিন্দুধর্মে পবিত্র অক্ষয়বট সম্পর্কে কিছু অজানা কথা হিন্দুধর্মে পবিত্র অক্ষয়বট সম্পর্কে কিছু অজানা কথা Reviewed by Admin Amit on April 30, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.