ডুয়ার্সের গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক এখন পর্যটক মহলে সুপরিচিত। ২০০৯ সালে পরিবেশ ও অরণ্য মন্ত্রক এই উদ্যানকে ভারতের সংরক্ষিত এলাকাগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দেয়। এই উদ্যান একটি মাঝারি আয়তনের তৃণভূমি ও অরণ্য। জলদাপাড়ার মতো গরুমারাও ভারতীয় গন্ডারের আবাসভূমি হিসেবে পরিচিত। লাটাগুড়ি থেকে চালসা যাওয়ার পথে ৯ কিমি দূরে ডান হাতে গরুমারা অভয়ারণ্যের প্রবেশ পথ ও চেকপোস্ট।
চেকপোস্ট পেরিয়ে চা-বাগানকে বাঁয়ে রেখে রাস্তা চলে গেছে গভীর জঙ্গলে। এই পথ ধরে আরও ৬ কিমি গেলে গরুমারা বনবাংলো। বাংলোয় রাত কাটানো এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। বনবাংলোর পাশেই রাইনো পয়েন্ট ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখুন নীচে ইংডং নদী, নদীর পাড়ে সবুজ ঘাসজমি এবং বন্যজন্তুদের এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো। পাখি দেখতে চাইলেও গরুমারার বিকল্প নেই। গরুমারায় বেড়াতে গিয়ে বনবাংলোয় থাকলে রাতে ওয়াচটাওয়ার থেকে স্পটলাইট ফেলে বন্যপ্রাণীদের দেখার সুযোগ আছে। বনবাংলোর সামনে ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ঘেরা জায়গায় পোষা হাতিদের রাখা হয়।
ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডার, বাইসন আর হাতির জন্য গরুমারা অভয়ারণ্য বিখ্যাত। এখানে ভারতীয় গন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি নজরে আসায় ১৯৪৯ সালে গরুমারাকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য বলে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হলেও ১৯৭৬-এ অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শুরুতে গরুমারার আয়তন ছিল মাত্র ৭ বর্গ কিলোমিটার। আশেপাশের জমি ছড়িয়ে পড়তে পড়তে বর্তমানে এর আয়তন প্রায় ৮০ বর্গ কিলোমিটার। বহেড়া, কাটুস, শিমুল, শিরীষ, জাম, লালি গাছে এই অরণ্য ছড়িয়ে আছে।
বনবাংলো থেকে সামান্য দূরে যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচটাওয়ার। এটাই একশৃঙ্গী গণ্ডারের খাসতালুক। ওপর থেকে দেখে নিন মূর্তি নদী ও বিস্তীর্ণ চারণভূমি। এখানেই দেখা মিলতে পারে বাইসন, গন্ডার, হাতির পাল, হরিণ আর ময়ূর-ময়ূরীদের সঙ্গে। হাতের কাছে দূরবীন থাকলে বন্যজন্তুদের দেখা পেতে সুবিধা হবে। ওয়াচ টাওয়ারে রাত্রি যাপনের রোমাঞ্চ আছে। জঙ্গলের পথে দৌড়ে বেড়ায় বুনো মোরগ। ধীরেসুস্থে রাস্তা পার হয় ময়ূর। লাটাগুড়ি থেকে চালসার পথে ২ কিমি এগোলে ডান হাতে চুকচুকি। চুকচুকি হ্রদের ধারে চুকচুকি ওয়াচটাওয়ার। শীতকালে এখানে নানান প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের মেলা বসে যায়। গরুর গাড়িতে চেপে ঘুরে আসা যায় মেদলা ওয়াচটাওয়ার।
কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে রাত্রি ৮টা ৩০ মিনিটে ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে চেপে পরদিন শিলিগুড়ি নামুন। সেখান থেকে ভারা গাড়িতে লাটাগুড়ি হয়ে গরুমারা অরণ্যে পৌঁছন।
কোথায় থাকবেন: গরুমারা অভয়ারণ্যে কাঠের বনবাংলো আছে। বনবাংলো বুকিং করতে হবে, ডি এফ ও, জলপাইগুড়ির থেকে। এছাড়া রয়েছে ‘গরুমারা জঙ্গল ক্যাম্প’
গরমের ছুটি কাটুক ডুয়ার্সের গভীরে গরুমারা অরণ্যে
Reviewed by Admin Amit
on
May 03, 2018
Rating:
No comments: