শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পরে শ্রীরাধার কী হয়েছিল?

 


রাধাকৃষ্ণের কাহিনিকে সর্বদাই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় কেন? কেন বার বার মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনি কি বৃন্দাবনেই শেষ? পুরাণ বা অন্য গ্রন্থাদি কী জানায় শ্রীরাধা সম্পর্কে? কৃষ্ণবিহনে তাঁর কী হল?
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, কোনও প্রাচীন গ্রন্থেই শ্রীরাধাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, শ্রীরাধা অনেক পরের কল্পনা। শ্রীময়ীর চরিত্রে একদিকে যেমন মিশেছে পদাবলির কবিদের মরমিয়া প্রেম, তেমনই অন্যদিকে এতে পৃক্ত হয়ে রয়েছে সুফি সাধকদের মর্মভাবনাও। আবার তাতে মিলেমিশে গিয়েছে লোকজীবনের সুখ-দুঃখ। এই সব একাকার হয়েই জন্ম দিয়েছে শ্রীরাধার মতো এক আশ্চর্যময়ীর। তিনি একদিকে যেমন হ্লাদিনীশক্তির প্রকাশ, তেমনই অন্যদিকে তিনি মূর্ত প্রেম।
এসব সত্ত্বেও রাধাকৃষ্ণের কাহিনিকে সর্বদাই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় কেন? কেন বার বার মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনি কি বৃন্দাবনেই শেষ? বৈষ্ণব কবিরা অবশ্য এমন কথা মানতে নারাজ। কৃষ্ণের মথুরা গমনের পরে তাঁরা রাধার চিত্তে ভাবসম্মিলনের কথা বার বার লিখে গিয়েছেন। কিন্তু সে তো কবিকল্পনা। পুরাণ বা অন্য গ্রন্থাদি কী জানায় শ্রীরাধা সম্পর্কে? কৃষ্ণবিহনে তাঁর কী হল?
কৃষ্ণ মথুরা যাওয়ার আগে রাধাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই কথা কি আর রাখা হয়নি? অপেক্ষায় অপেক্ষায় কেটে গিয়েছিল কি শ্রীরাধার জীবন? মথুরায় কৃষ্ণ রুক্মীনিকে বিবাহ করেন। তিনি বিদর্ভ রাজকন্যা। ছোটবেলা থেকেই রুক্মীনি কৃষ্ণের কথা শুনে এসেছিলেন, তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিবাহ স্থির হয় রাজা শিশুপালের সঙ্গে। রুক্মীনি কৃষ্ণকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন তাঁকে উদ্ধার করতে। কৃষ্ণ আসেন এবং রুক্মীনিকে হরণ করে বিবাহ করেন।
মহাভারতের এই কাহিনি থেকে পরে একটা প্রশ্ন উদিত হয়, যদি কৃষ্ণের মনপ্রাণ জুড়ে শ্রীরাধা বিরাজ করে থাকেন, তবে কীভাবে তিনি রুক্মীনিকে বিবাহ করতে পারেন? মজার ব্যাপার, ‘মহাভারত’-এ কোথাওই শ্রীরাধার নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই। কিন্তু গণচিত্তে রাধাকল্পকে বিচার করলে এমন কিছু বিষয় উঠে আসে, যার মানে বোঝা সত্যিই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সেগুলি এই প্রকার—
• শ্রীরাধার জন্মদিন ‘রুক্মীনি অষ্টমী’ হিসেবে পালিত হয়।
• রুক্মীনিকে রাধারই আর এক রূপ বলে অনেকে মনে করেন।
এখান থেকে মনে হতেই পারে, রাধা আর রুক্মীনি একই চরিত্র। রুক্মীনি রাধারই আর এক রূপ। বহু পুরনো মন্দিরে কৃষ্ণ ও রুক্মীনির মূর্তি রয়েছে, যার সঙ্গে রাধা-মূর্তির কোনও পার্থক্যই নেই। ‘মহাভারত’-এ রাধার উল্লেখ না থাকলেও এক গোপিনীর কথা রয়েছে, যিনি বৃন্দাবনে কৃষ্ণের প্রিয়তম সহচরী ছিলেন। তিনিই কি রুক্মীনি ওরফে রাধা? এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, রুক্মীনি রাজকন্যা আর রাধা সাধারণ গোপবালা। তাঁরা এক হন কী করে? এর উত্তর ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন পুরাণে। এখানে একটি আশ্চর্য গল্প রয়েছে। রাক্ষসী পুতনা নাকি শিশু রাজকন্যা রুক্মীনিকে হরণ করে। কিন্তু রুক্মীনির ওজন অলৌকিকভাবে বেড়ে যায়। পুতনা তাঁকে একটি পদ্মফুলের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তখনই বৃষভানু তাঁকে খুঁজে পান এবং রাধা হিসেবে পালন করতে থাকেন। কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে যাওয়ার পরে বিদর্ভরাজ হারিয়ে যাওয়া কন্যার সন্ধান পান এবং তাঁকে তাঁর গৃহে নিয়ে য়ান। এই কাহিনি মানলে, রাধাই রুক্মীনি। এবং কৃষ্ণ তাঁকেই বিবাহ করেন।
এই কাহিনি অসম্ভব তৃপ্তি দেয়। কারণ, তত্ত্ব অনুসারে রাধাই কৃষ্ণের শক্তি। তাঁকে হারিয়ে কীভাবে থাকবেন পুরুষোত্তম? কোথাও তো মিলতে হবেই তাঁদের!  
শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পরে শ্রীরাধার কী হয়েছিল? শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পরে শ্রীরাধার কী হয়েছিল? Reviewed by Admin Amit on June 14, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.