মা কালীর দুর্গা রুপ


 


 হরপ্রিয়া হলেন দানবনাশিনী। মহিষাসুর বধ করে দেবী যখন কৈলাসে দেবাদিদেবের সাথে সংসার ধর্মে মগ্ন তখুনি আবির্ভাব ঘটে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই অসুরের।
মহিষাসুরের মতো এরাও ব্রহ্মার কাছে "পুরুষের অবধ্য" হবার বর প্রাপ্তি করে ।এদের সাঙ্গপাঙ্গ ছিলো ধুম্রলোচন, চণ্ড- মুণ্ড, রক্তবীজ নামক বরপ্রাপ্ত বীর অসুর , এছারাও বহু দানব ও অসুর গোষ্ঠী।ত্রিলোকে অসুরের অত্যাচারে বিধস্ত এমনকি অমরাবতীর সুরবৃন্দও অসুরদের কাছে স্বর্গ হারিয়ে পলায়মান । প্রজাপতি ব্রহ্মা আর কি করেন! দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে সব ব্যক্ত করলেন।মহাদেব জানালেন- "দেবী কিভাবে শক্তিস্বরূপ ধরবেন।তিনি এখন সংসার লীলায় মগ্ন"।ব্রহ্মা বুদ্ধি দিলেন। দেবাদিদেবকে অনুরোধ করলেন দেবী পার্বতীর কৃষ্ণাঙ্গ নিয়ে দেবীকে রুঢ় আঘাত দিতে। মহাদেব কি ভাবে প্রানাধিক প্রিয়াকে আঘাত দিয়ে কথা বলবেন ?
একথা ভেবে মহাদেব কষ্ট পেলেন, আবার অসুরদের বাড়বাড়ান্তে ত্রিলোক রসাতলে যাবার উপক্রম। অবিলম্বে অসুরদের বিনাশ প্রয়োজন । একদিন ব্রহ্মার ইচ্ছায় এক সুন্দরী অপ্সরা কৈলাসে এলেন। ভগবান শিব তখন সেই অপ্সরার রূপের প্রশংসা করে দেবী পার্বতীকে "কৃষ্ণাঙ্গী" বলে বসলেন।দেবী অপমানিত হয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে কৈলাস ছেড়ে চলে গেলেন। স্থির করলেন তপস্যার মাধ্যমে গৌর বরণ লাভ করবেন । দেবীর তপস্যা সফল হল। দেবী পার্বতীর বর্জিত কৃষ্ণাঙ্গ কোষ থেকে এক দেবী সৃষ্টি হল- ইঁনি জয়দুর্গা বা কৌষিকী , চণ্ডির কোনো কোনো ব্যাখাকার এই দেবীকে শিবদূতী নামে ব্যাখা করেছেন ।
দেবীর রূপের খ্যাতি শুনে শুম্ভ নিশুম্ভ দেবীকে বিবাহের জন্য অধীর হলেন। দেবী জানালেন যুদ্ধে যে পুরুষ পরাজিত করতে পারবে- তাকেই বিবাহ করবেন। এটা হল অসুর নিধনের জন্য মহামায়ার মায়া। ধূম্রলোচন দেবীকে বন্দী করতে গেলে দেবী সেই অসুর কে ভস্ম করলেন । এরপর এলেন চণ্ড ও মুণ্ড নামক অসুর। দেবী কৌশিকীর ভ্রকুটি থেকে তখনই আবির্ভূতা হলেন দেবী চামুণ্ডা।দেবী চামুণ্ডার যুদ্ধ অতি আশ্চর্য। অসুরদের কাঁচা ভক্ষণ করলেন। এমনকি অসুরদের নিক্ষিপ্ত অস্ত্র গুলিকেও। শুধু এই নয়, রথ- সারথি- হস্তী- অশ্ব গুলিকেও চর্বণ করে গ্রাস করলেন ।পদদলিত করে অসুরদের ছিন্নভিন্ন করে দিলেন। অন্তিমে চণ্ড ও মুণ্ড নামক অসুর দ্বয়ের শিরোচ্ছেদ করে সেই মস্তক দুটি দেবী কৌষিকীকে উপহার দিলেন।
আবার দেবী কৌষিকী যখন রক্তবীজ বধ করলেন তখন এই দেবী সেই অসুরের রুধির ধারা পান করেছিলেন । দুর্গা পূজার সময় সন্ধিপূজাকালে এই চামুণ্ডা দেবীর পূজা হয় । অতি সতর্কে বিবিধ শাস্ত্র মার্গ অনুসরণ করে পুরোহিত দেবী চামুণ্ডার পূজা করেন। দেবীর পূজায় এসময় বলি, দেবীর ভোগে সুধা প্রদান করা হয়। এই সময় দীক্ষা মন্ত্র জপ সহ ধার্মিক ক্রিয়া করলে তা অতীব ফলদায়ী হয় ।
অগ্নিপুরাণে এই চামুণ্ডা মূর্তি আট রকম বলে বর্ণিত হয়েছে-
১) রুদ্রচর্চিকাঃ- ইনি হস্তী চর্ম পড়ে থাকেন। ছটি হস্ত এঁনার । নর মুণ্ড, কাটারি, শূল ও পাশ ধারন করেন । ঊর্ধ্ব মুখ ও এঁনার চরণ উপরদিকে তোলা ।
২) রুদ্রচামুণ্ডাঃ- এঁনার আট হাত । নরকপাল , কাটারি, শূল, পাশ, নরমুণ্ড ও ডুগডুগি ধারন করে থাকেন । ইনি নৃত্য পরায়ণা ।
৩) মহালক্ষ্মীঃ- ইনি চতুর্মুখী , অষ্টাভুজা, পদ্মাসীনা । ইনি নর , অশ্ব, মহিষ ও হস্তীকে ধরে ভক্ষণ করছেন ।
৪) সিদ্ধচামুণ্ডাঃ- ইনি দশভুজা , ত্রিনয়না , ডান হস্তে খড়গ , অসি, ডুগডুগি ও বাম হস্তে ঘণ্টা, ঢাল, খট্টাঙ্গ ও ত্রিশূল ।
৫) সিদ্ধযোগেশ্বরীঃ- ইনি দ্বাদশ ভুজা । আগের দেবীর অস্ত্রগুলি ছাড়াও ইনি পাশ ও অঙ্কুশ ধারন করে আছেন । ইনি জীবের সর্ব সিদ্ধি দায়িনী ।
৬) রূপবিদ্যাঃ- ইনিও দ্বাদশ ভুজা ।
৭) ক্ষমাঃ- এঁনার দুহস্ত । বৃদ্ধা ও শৃগাল এঁনার চতুর্দিকে থাকেন ।
৮) দন্তুরাঃ- এঁনার সমস্ত দন্ত বহির্গত থাকে। দুটি হাটু উচু করে এক হাটুর ওপর তিনি অধিষ্ঠিত আছেন।
মা কালীর দুর্গা রুপ মা কালীর দুর্গা রুপ Reviewed by Admin Amit on July 03, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.