তারকেশ্বর মন্দির। ছবি: উইকিপিডিয়া |
শ্রাবণ মাস। ঝির ঝিরে বৃষ্টি অথবা ঘোর ধারাপাত। তার মধ্যেই কাঁধে বাঁক নিয়ে হাজার হাজার মানুষ। শ্রাবণের কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে প্রতি শনিবারের এ অতি পরিচিত দৃশ্য। বাংলার অন্যতম প্রধান শৈবতীর্থ তারকেশ্বরধামের উদ্দেশে মানুষের এই তীর্যযাত্রা বঙ্গসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পথচারী মানুষের যত দুর্ভোগই সৃষ্টি করুক না কেন এই বাৎসরিক তারকেশ্বর যাত্রা, তারকনাথের মহিমা অস্বীকার করতে পারেন না কেউই। প্রশ্ন জাগে, বাংলায় তো শিব মন্দিরের অভাব নেই, তাহলে এই একটি মাত্র মন্দিরকে ঘিরে এই বিপুল উৎসাহের কারণ কী?
জেনে নেওয়া যাক তারকেশ্বর-মহিমা—
• হুগলি জেলার এই মন্দিরের ইতিহাস অতি প্রাচীন। কিংবদন্তি জানায়, বিষ্ণুদাস নামে জনৈক শিবভক্ত অযোধ্যা থেকে হুগলিতে এসে সপরিবারেই সেখানে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। খানিকটা একঘরে হয়েই বাস করতেন বিষ্ণুদাস। পরিস্থিতি এমনটাই হয়ে দাঁড়ায় যে, বিষ্ণুদাসকে স্থানীয় মানুষ বাধ্য করে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে যে, তিনি সৎ মানুষ। বিষ্ণুদাসকে তপ্ত লোহার একটি দণ্ডকে খালি হাতে ধরতে বলা হয়। তিনি তা-ই করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সেই সঙ্গে মনে গভীর যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন। তিনি তাঁর ইষ্টদেবতা মহাদেবকে ডাকতে থাকেন এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য।
• কয়েকদিন পরে বিষ্ণুদাসের ভ্রাতা স্থানীয় জঙ্গলে এক আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করেন। তিনি দেখেন, গরুরা প্রতিদিন জঙ্গলের একটি বিশেষ স্থানে গিয়ে দুধ দিয়ে আসে। তিনি এই স্থানে গিয়ে একটি পাথর দেখতে পান।
• এই সময়েই বিষ্ণুদাস স্বপ্নাদেশ পান যে, জঙ্গলে তাঁর ভাইয়ের দেখা ওই পাথরটিই মহাদেবের তারকেশ্বর রূপ। সেখানে বিষ্ণুদাস একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এবং সেই স্থানই তারকেশ্বর ধাম নামে পরিচিত হয়।
• সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারকেশ্বর মন্দির অনেকবার নির্মিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। বর্তমান মন্দিরটিও বেশ প্রাচীন। ১৭২৯ সালে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজারা এই মন্দির নির্মাণ করান।
স্বয়ম্ভূলিঙ্গ তারকনাথ। ছবি: ফেসবুক থেকে
• তারকেশ্বর মন্দির বাংলার চালা স্থাপত্যের আদর্শ উদাহরণ। যে ক’টি প্রাচীন চালা মন্দির বাংলায় টিকে রয়েছে, তার মধ্যে তারকেশ্বর অন্যতম।
• তারকেশ্বর স্বয়ম্ভূলিঙ্গ। এই লিঙ্গের মহিমা অপার।
• প্রাচীন এই কিংবদন্তির সঙ্গে কালে কালে যুক্ত হতে থাকে দেবমহিমা। তারকেশ্বর মন্দির-সংলগ্ন পুষ্করিণী দুধপুকুরকে ঘিরেও গড়ে ওঠে মিথ। বলে হতে থাকে, এই পুকুরের জল আরোগ্যকারী। ক্রমেই বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীর ভিড়।
• মহাশিবরাত্রি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে তারকেশ্বর মন্দিরে বিশেষ উৎসব হয়। প্রতি সোমবার হয় বিশেষ পূজা। তবে, শ্রাবণের সোমবারগুলিতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে তারকনাথকে গঙ্গোদকে স্নান করানোর উদ্দেশ্যে।
• প্রাচীন কিংবদন্তি যা-ই বলুক না কেন, তারকেশ্বর যাত্রাকে সর্বজনীন করে তোলে ১৯৭৭ সালের বাংলা ছবি ‘বাবা তারকনাথ’। অতি জনপ্রিয় এই সিনেমা তারকেশ্বর মহিমাকে পুনর্নবীকৃত করে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
শ্রাবণের সোমবার তারকেশ্বর ধামে কেন যান লক্ষ ভক্ত, জানুন শিব-মহিমা
Reviewed by Admin Amit
on
August 08, 2017
Rating:
No comments: