তুলসি গাছ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য

 


বাড়িতে তুলসি গাছ নিশ্চয় আছে? কিন্তু কেন বলুন তো বাড়িতে তুলসি গাছ এনে রেখেছেন? সঠিক উত্তরটা জানা নেই তো? কোনও চিন্তা নেই।  
একাধিক প্রাচীন পুঁথি ঘেঁটে জানা গেছে, যে বাড়িতে তুলসি গাছ রয়েছে সেখানে রোগ-ভোগের প্রবেশ নিষেধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সুখ শান্তির অভাব কোনও দিন হয় না। এমনকি এমনও বিশ্বাস আছে যে তুলসি গাছ দোর গোড়ায় রাখলে মৃত্যুরও পায়েও শিকল পরে যায়। এবার বুঝলেন তো প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে আর কিছু থাকুন না থাকুন, তুলসি গাছ কেন থাকে! এখানেই শেষ নয়। তুলসি গাছে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে আরও এমন কিছু তথ্য পরিবেশন করা হল, যা পড়তে পড়তে আপনি অবাক হয়ে যাবেনই। শুধু তাই নয়, এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানাও জরুরি। কারণ যে বাড়িতে তুলসি গাছ রয়েছে তাদের এসব তথ্যগুলি জানা না থাকলে নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে তুলসি গাছ বাড়িতে স্থাপন করার আগে যে যে বিষয়গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। সেগুলি হল- 
১. তুলসি পাতা চিবোতে নেই: 
অনেকেই শরীরকে চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিন তুলসি পাতা খেয়ে থাকেন। এই অভ্যাসে কোনও ভুল নেই। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে তুলসি পাতা খাওয়ার সময় ভুলেও তা চিবতে নেই! কারণ এতে উপস্থিত অ্যালোয়িস নামে একটি উপাদান দাঁত এবং মাড়ির স্বাস্থ্যের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। তাই ভুলেও এবার থেকে তুলসি পাতা চিবতে যাবেন না যেন।
২. কখনও শিব লিঙ্গে তুলসি পাতা নিবেদন করবেন না: 
একাধিক প্রাচীন গ্রন্থে একটি গল্পের উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে দম্ভ নামে এক অসুর ছিল এক সময়। তার কোনও সন্তান ছিল না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল সন্তানের আশায় ভগবান বিষ্ণুর তপস্যা করবেন। শুরু হল আরাধনা। দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা কঠিন তপস্যার পর একদিন ভগবান বিষ্ণু আর্বিভূত হলেন। দম্ভ অনুরোধ করল তার সন্তান যেন ত্রিলোকে সর্বশক্তিমান হয়। কেউ যেন তার সন্তানকে কখনও হারাতে না পারে। দম্ভের অনুরোধ মতো ভগবান বিষ্ণু সেই আর্শীবাদ করলেন। জন্ম নিল পুত্র সন্তান। তার নাম রাখা হল শঙ্খচাদ। বড় হওয়ার পর সর্বশক্তিমান শঙ্খচাদ ছোটাতে শুরু করল তার বিজয় রথ। একে এক দখল করল ত্রিলোক। ইতিমধ্যে সে ভগবান ব্রহ্মার আর্শীবাদে অর্জন করেছে শ্রী কৃষ্ণ কবজ। এই কবজ যার শরীরে থাকবে, তাঁকে কেউ কোনও দিন হারাতে পারবে না। কবজের বলে দেবতাদের উপর মারাত্মক অত্যাচার শুরু করল শঙ্খচাদ। এক সময় অসুরদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেবতারা ব্রহ্মার সাহায্য চাইলেন। তখন ব্রহ্মা জানালেন, শঙ্খচাদকে শ্রী কৃষ্ণ কবজ দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, "যতদিন তুলসি তার বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে সঙ্গে থাকবে ততদিন কবজের শক্তিও বাড়তে থাকবে।" তাই একবার যদি তুলসিকে শঙ্খচাদের থেকে আলাদা করা যায়। তাহলে তাঁকে মারা কোনও সমস্যাই হবে না। ব্রহ্মার কথা মতো দেবতারা শুরু করলেন পরিকল্পনা। সে সময় ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি পরিকল্পনা করলেন সন্ন্যাসীনীর বেশে তিনি শঙ্খচাদের কাছে গিয়ে শ্রী কৃষ্ণ কবজ চাইবেন। সেই মতো সুন্দরী সন্ন্যাসীনীর রূপ নিয়ে শঙ্খচাদের কাছে গিয়ে রক্ষাকবজ চাইলেন বিষ্ণু। দুর্বল মুহূর্তে অসুর রাজ তা দিয়েও দিলেন। এর ঠিক পর পরই বিষ্ণু পুরনার রূপ বদলে শঙ্খচাদকে তুলসির বিষয়ে খারাপ কথা বলতে শুরু করলেন। সূরার নেশায় দিকভ্রান্ত শঙ্খচাদ এইসব কথা বিশ্বাস করে তুলসিকে ত্যাগ করলেন। ফলে কবজ এবং তুলসি ছাড়া শঙ্খচাদ হয়ে পরলেন একেবারে শক্তিহীন। এই সময় দেবাদিদেব মহাদেব আক্রমণ করলেন অসুর রাজকে। যুদ্ধে মৃত্যু হল শঙ্খচাদের। তুলিসর স্বামীকে যেহেতু ভগবান হত্যা করেছিলেন তাই শিব লিঙ্গে তুলসি নিবেদন করা উচিত নয় বলে মনে করা হয়। 
৩. বিশেষ কিছু দিনে তুলসি পাতা ছেঁড়া উচিত নয়: 
বিদ্বানদের মতে একাদশী, রবিবার, সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময় ভুলেও তুলসি পাতা ছেঁড়া উচিত নয়। এই বিশেষ দিনগুলিতে এমন কাজ করলে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। 
৪. প্রতিদিন তুলসি গাছের পুজো করতে হবে : 
শাস্ত্রমতে প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যা বেলা ধুপ ধুনো দিতে হবে তুলসি মাকে। সুযোগ থাকলে তুলসি গাছের পুজো করার সময় মাটির প্রদীপ রাখতে হবে তুলসি গাছের সামনে। এমনটা করলে দেখবেন সুফল পাবেনই। বিশ্বাস করা হয় যে যারা সকাল বিকাল তুলসি মায়ের পুজো করেন তাদের জীবনে কোনও দিন অর্থ কষ্ট হয় না। 
৫. বাস্তু দোষ কাটে: 
বাস্তু শাস্ত্র মতে বাড়িতে কোন দোষ থাকলে তুলসি গাছে এনে রাখা উচিত। এমনটা করলে সমস্ত দোষ কেটে যায়। সেই সঙ্গে সুখ-সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়। 
৬. খারাপ শক্তিকে দূরে রাখে: 
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে যত আমরা নেগেটিভ এনার্জির থেকে দূরে থাকবো, তত খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা কমে। কিন্তু এমনটা তো বোঝা সম্ভব নয় যে আমাদের আশেপাশে নেগেটিভ এনার্জির নিজের জাল বিছচ্ছে কিনা। তাই বাড়িতে তুলসি গাছ রাখা মাস্ট! কারণ তুলসি মা সব রকমের নেগেটিভ এনার্জিকে দূরে রাখে। ফলে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়ায়। 
৭. বাড়ির পরিবেশে সুন্দর হয়ে ওঠে: 
হাসি-খুশিতে পরিপূর্ণ অন্দর মহলের স্বপ্ন তো আমরা সবাই দেখি। কিন্তু পাই কজন বলুন। তুলসি মাতা কিন্তু আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। কীভাবে জানেন? এমনটা দেখা গেছে, যে বাড়িতে তুলসি গাছের জায়গা হয় সেখানে দুঃখ, রাগ, অভিমান, এসবের কোনও জায়গাই হয় না। ফলে বাড়ির অন্দর এবং জীবন আনন্দে ভরে ওঠে। 
৮. শুকিয়ে যাওয়া গাছ ভুলেও রাখবেন না: 
বাড়িতে রাখা তুলসি গাছ শুকিয়ে গেলে ভুলেও তা বাড়িতে রাখে দেবেন না। বরং তা জলে ভাসিয়ে দেবেন। কারণ শুকিয়ে যাওয়া তুলসি গাছ বাড়িতে রাখলে মারাত্মক কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
৯. ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে: 
একথা তো নিশ্চয় কারও অজানা নেই যে একাধিক রোগের চিকিৎসায় আজও তুলসি পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষত ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি-কাশির মতো রোগের উপশমে তুলসি পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। 
১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: 
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন যদি ১-২ টো করে তুলসি পাতা খাওয়া যায়, তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে কোনও ধরনের সংক্রমণই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
তুলসি গাছ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য তুলসি গাছ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য Reviewed by Admin Amit on February 17, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.