সে প্রায় কয়েকশো বছর আগের কথা। বাঁকুড়ার রাইপুরের মহামায়া মন্দিরে নাকি নরবলি দেওয়া হত। আর সেই নরবলির রক্ত বয়ে যেত এক নালার মধ্যে দিয়ে। রক্তের স্রোত গিয়ে পড়ত কংসাবতীর জলে। যদিও সেসব আজ অতীত। তবে রাইপুরের রাজবাড়ির সেই প্রতাপ না থাকলেও মহামায়া মন্দিরের দুর্গাপুজো আজও অমলিন।
চুয়াড় বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া বাঁকুড়ার রাইপুরের তৎকালীন রাজা দুর্জন সিংহের খড়্গ আজও মহামায়া মন্দিরে মহাঅষ্টমীতে ছাগ বলিতে ব্যবহৃত হয়। সারা বছর রাজবাড়িতে এই খড়্গ সযত্নে রাখা থাকে। ষষ্ঠীর দিন শোভাযাত্রা সহকারে তা আনা হয় মন্দিরে। বিজয়া দশমীর পুজা শেষে একইভাবে তা নিয়ে যাওয়া হয় রাজবাড়িতে।
রাজপরিবারের বর্তমান সদস্য শিবনাথ সিংহের দাবী, চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া দুর্জন সিংহের ব্যবহৃত এই খড়্গ ও একটি মাত্র মশাল তাঁদের কাছে রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে বয়সের ভারে এই অস্ত্রে মরচে পড়লেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অম্লান। মহামায়া মন্দিরে পুজোর চারদিন সাধারণ মানুষের অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠে সেই খড়্গ।
বর্তমান রাইপুর এলাকার মানুষের কাছে অন্যতম আরাধ্যা দেবী মহামায়া। শুধু এ রাজ্য নয়, রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঝাড়খন্ড,ওড়িশা থেকেও প্রচুর মানুষ ভিড় জমান এই মন্দিরে। তাঁদের বিশ্বাস এখানে ভক্তিভরে পুজো দিলে দেবী সকল মনোস্কামনা পূর্ণ করেন। সারা বছর নিত্য পুজোর সাথে শারদীয়া দুর্গাপুজার চারদিন এখানে বিশেষ পুজা পাঠের ব্যবস্থা থাকে। বর্তমানে এখানে অসংখ্য ছাগ বলি হয়। যার একটা বিশেষ অংশ ভক্তদের ‘মানত শোধ’ হিসেবে আসে।
রাজা দুর্জন সিংহের ব্যবহৃত খড়্গ ছাড়াও তাঁর ব্যবহৃত একটা মশাল এখনো রয়েছে। স্থানীয় মানুষের কাছে তা হাত কামান নামে পরিচিত। এখনও মহাষ্টমীর পুজোতে সেই কামানের তোপ ধ্বনি দিয়ে দেবী মহামায়ার পুজো শুরু হয়।
রাজপরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ, সরকারিভাবে রাজতন্ত্রের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে রাজা দুর্জন সিংহের ব্যবহৃত অনেক অস্ত্র সহ বেশ কিছু মূল্যবান জিনিস চুরিও হয়ে গেছে। এমনকি যে ঢাল নিয়ে তিনি সরাসরি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছিলেন তারও কোন খোঁজ নেই।
মহামায়া মন্দির পরিচালন কমিটির সদস্য সুপ্রভাস রায় বলেন, কয়েকশো বছরের প্রাচীণ এই পুজো। বর্তমানে রাইপুর এলাকায় অনেক বারোয়ারি পুজো হয়েছে। এসেছে থিমের চাকচিক্য। কিন্তু এতোসবের পরেও মহামায়া মন্দিরের পুজোর আকর্ষণ এতোটুকুও কমেনি। বরং বেড়েছে।
রাজপরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ, সরকারিভাবে রাজতন্ত্রের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে রাজা দুর্জন সিংহের ব্যবহৃত অনেক অস্ত্র সহ বেশ কিছু মূল্যবান জিনিস চুরিও হয়ে গেছে। এমনকি যে ঢাল নিয়ে তিনি সরাসরি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছিলেন তারও কোন খোঁজ নেই।
মহামায়া মন্দির পরিচালন কমিটির সদস্য সুপ্রভাস রায় বলেন, কয়েকশো বছরের প্রাচীণ এই পুজো। বর্তমানে রাইপুর এলাকায় অনেক বারোয়ারি পুজো হয়েছে। এসেছে থিমের চাকচিক্য। কিন্তু এতোসবের পরেও মহামায়া মন্দিরের পুজোর আকর্ষণ এতোটুকুও কমেনি। বরং বেড়েছে।
নরবলির রক্তে রাঙাত কংসাবতীর জল
Reviewed by Admin Amit
on
July 04, 2018
Rating:
No comments: