ভক্তদের ভূত দেখিয়ে ছেড়েছেন পক্কান্নেশ্বরী কালী



মায়ের পুজোর আসন সাজাতে গিয়ে ভূত দর্শন করেছেন পরিবারের সদস্যরা। এমনই অদ্ভূতুরে শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির পুজো। সোনা রুপো নয় নিতান্তই মাটির আসনেই পূজা নেন শান্তিপুরের পক্কান্নেশ্বরী কালি মা। মার্বেল পাথর দিয়ে সাজাতে গিয়েই মারাত্মক ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী হন পরিবারের মানুষ। মৃত্যু হয় পরিবারের সদস্যরেও। সেই থেকেই মাটির আসনেই পূজিতা হন জজ পণ্ডিত বাড়ির কালী পুজো।
বনেদী বাড়ি পুজোয় অনেকেই তাদের দেবীকে সোনা রুপোয় সাজিয়ে তোলবার চেষ্টা করেন। ভক্তদের নিষ্ঠা ভরে দেওয়া সে সব উপঢৌকনে আরও সুন্দর হয়ে ওঠেন দেবী।  কিন্তু শান্তিপুরের জজ পণ্ডিতের পক্কান্নেশ্বরী এসব চান না। তিনি  নিতান্তই সাধারণ। অসাধারণ হয়ে ওঠার লক্ষন তাঁর নেই। তাই অসাধারণ রূপে তাকে গড়ে তোলার চেষ্টা হতেই তিনি হয়ে উঠেছেন ভয়ঙ্করী। পরখ করিয়েছেন ভৌতিক অভিজ্ঞতা। রাগে ভক্তের প্রাণ নিতেও পিছপা হননি তিনি। এমনই কথা গল্প ঘোরাফেরা করে জজ পণ্ডিত বাড়ির কালিপুজোকে কেন্দ্র করে।
‘গল্পটা হলেও সত্যি’- ঘটনাটি কেমন? পরিবারের সদস্যদের থেকে জানা গিয়েছে, মায়ের পাটের নীচে থাকে মাটির পঞ্চমুন্ডীর আসন। এই পঞ্চমুন্ডীর আসনটি আজও মাটির তৈরি। গোটা মন্দির চত্ত্বর সাজিয়ে ফেললেও মায়ের ওই আসন আজও মার্বেল বা অন্য কিছু দিয়ে বাঁধানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ কথিত আছে একবার মায়ের এই পঞ্চমুন্ডীর আসন বাঁধাই করে নির্ম্মাণ করার কাজে বাড়ীর এক পূর্ব্বপুরুষ উৎসাহী হয়েছিলেন। তাঁর আদেশানুসারে শ্রমিকরা কাজও শুরু করেছিল। কিন্তু এরপর থেকেই বিভিন্ন ভৌতিক কান্ড কারখানায় ভীত হয়ে তারা পালায়। ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল পরিবারের সদ্যদেরও। কিন্তু এতেও না দমে ওই সদস্য নিজেই কোদাল দিয়ে ওই বেদী বাঁধাই করতে যান। বেদীত একটি কোপ পড়া মাত্র তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যান । সেই থেকে বেদীর চারপাশ বাঁধানো হলেও প্রধান বেদীটি আজও গোবর এবং মাটি দ্বারা নির্ম্মাণ করা হয় প্রতি বৎসর। এর চেয়ে বেশী এগোবার সাহসও পাননি কেউ।
আনুমানিক ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে শান্তিপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি পুরুষ স্বর্গীয় শ্রী পিতাম্বর চট্টোপাধ্যায় মহাশয় এই পূজার শুরু করেন। শান্তিপুরের এই ঐতিহ্যশালী জজ-পন্ডিত বাড়ীতে পক্কান্নেশ্বরী মায়ের প্রতিমার উচ্চতা ১০ ফুট। চট্টোপাধ্যায় পরিবারে পক্কান্নেশ্বরী মায়ের পূজাতে প্রায় ২০ থেকে ২২ প্রকার নানাবিধ রকমারি পদ সহকারে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করা হয়। নৈবেদ্যর তালিকায় থাকে,  আতপ চালের সাদা ভাত, শুক্তো, কুমড়ো ও নানাবিধ শাক সম্মিলিত পদ (চোদ্দ শাক),  আলু, বেগুন, কুমড়ো, পটল, শাক ও নারকেল ভাজা, মোচার ঘন্ট, ৬. ফুলকপির ডালনা,  বাঁধাকপির ডালনা, এঁচোড়ের ডালনা, ডাল,  খিচুড়ি,  চাটনি, পায়েসের মতো খাবার।
এছাড়া থাকে বিশেষ নৈবেদ্য স্বরূপ গজা ও পক্কান্ন। পরিবারের সদস্যদের দাবি এই পক্কান্ন মায়ের অতি প্রিয়। তাঁর প্রিয় বস্তুটির নাম অনুসারেই মা ” পক্কান্নেশ্বরী মা ” নামে পরিচিত হন তিনি। আগে ১৮ টি মোষ এবং ১০৮ টি পাঁঠা বলি হতো পুজোয় তবে কেবলমাত্র পাঁঠাবলির রীতি প্রচলিত আছে। পূজা শেষে যে হোম করা হয় তাহাতে ১০০১ টি বেলপাতা বাড়ী তথা সমগ্র জাতির মঙ্গলের উদ্দেশ্যে আহুতি দেওয়া হয়। প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো পক্কান্নেশ্বরী কালি বাড়ির হয়েও এমনই ‘সর্বজনীন’ এমনই ‘মাটি’-র।
ভক্তদের ভূত দেখিয়ে ছেড়েছেন পক্কান্নেশ্বরী কালী ভক্তদের ভূত দেখিয়ে ছেড়েছেন পক্কান্নেশ্বরী কালী Reviewed by Admin Amit on July 12, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.