পুজোয় ডিমও নিয়েছেন দেবী জয়কালি। অবিশ্বাস্য হলেও এমনটাই সত্যি। হিন্দু দেব দেবীদের পুজো দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মিষ্টি, ফল বা বস্ত্রের এমন জিনিষই বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ডিমের ব্যবহার কখনোই দেওয়া হয় না। কারন শাস্ত্র অনুযায়ী আঁশ জাতীয় জিনিস দেব দেবীর পুজোয় ব্যবহার করা যায় না।
মায়ের ইচ্ছা হলে তাকে রোখে কার ক্ষমতা। এমনটাই সত্য শ্যামবাজারের জয়কালী বাড়ির ঘটনা। ভক্তের দেওয়া পুজোয় তিনি ডিমও নিয়েছিলেন। দেবীর বর্তমান সেবায়েতরা জানাচ্ছেন এই ঘটনা কোনও আদ্যিকালের কল্পে সাজানো গল্প কথা নয়। বছর কুড়ি আগেই এমনই ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন তাঁরা। মিতা চৌধুরীর কথায়, “আমরা প্রচুর পুরনো কাহিনী জানি না। তবে চোখের সামনে যা দেখেছি সেগুলোই মানুষকে বলি। এমন ঘটনার লৌকিক না অলৌকিক তার বিচারের বাইরে।”
ঠিক কেমন ছিল সেদিনের ঘটনা ? পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, সেদিন বিকাল বেলা নিজেদের মধ্যেই আলচনা চলছিল। আলোচনার বিষয় ছিল ঠাকুরের খাবার।” ঠাকুরের খাবারের জন্য মিষ্টি , ফল এসব দিয়ে পুজো দিয়ে যায়। আবার ঠাকুরের মাছ, মাংস ভোগ হিসাবে নিবেদন করার রীতিও রয়েছে। কিন্তু সেদিন তাঁরা আলোচনা করছিলেন কেউ যদি এই পুজোর উদ্দেশ্যে ফল , মিষ্টির জায়গায় ডিম দেয় তখন কি হবে? ঠাকুর কি তা গ্রহন করবেন ? মিতা চৌধুরী জানিয়েছেন।, “অদ্ভুত ভাবে কিছুক্ষণ পরেই একজন মন্দিরে পুজো দিতে আসেন ডিম নিয়ে।” ডিম দিয়ে পুজো শুনেই সবাই নাকচ করে দেন। অনেকে আবার কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভক্ত নাছোড়বান্দা ছিলেন। কিছুতেই তিনি না পুজো দিয়ে ফিরে যাবেন না। আর পুজো দিলে তিনি দেবেন ওই ডিম দিয়েই। মিতা চৌধুরী কথায়, “ঠাকুর আমাদের এমন পরীক্ষা নেবেন ভাবতে পারিনি।”
ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি ডিম ছাড়া কেন পুজো দেবেন না? ওই ভদ্রলোকের উত্তর ছিল তিনি ডিমের ব্যবসা করেন। আজ তিনি ঠিক করেছেন ব্যবসা শুরুর আগে মা’কে পুজো দেবেন। আর যেহেতু তিনি ডিমের ব্যবসায়ী তাঁর বিশ্বাস ওই ডিম দিয়ে পুজো অর্পণ করলেই দেবী খুশি হবেন। ব্যবসায় উন্নতি হবে তাঁর। পরিবারের বর্তমান সদস্যরা জানাচ্ছেন, “শেষ পর্যন্ত আমরা ওনার পুজো নিতে বাধ্য হয়। ঠাকুরকে পুজো করিয়ে ওই ডিম আমরা ওনাকে ফেরত দিয়ে দি।” ব্যবসায়ী একবারের জন্যও মন্দিরে প্রবেশ করেননি। বাইরে থেকেই পুজো নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এমন ঘটনাকে কেউ যদি গল্প কথা বলে তাতে কিচ্ছু যায় আসে না চৌধুরী পরিবারের। কারন এমন আরও ঘটনা তাঁদের সামনে ঘটেছে যা ব্যখ্যার বাইরে।
মন্দিরটি তৈরিই হয়েছিল অদ্ভুত ভাবে। সাড়ে তিনশো বছর আগে তাঁদের পরিবারেরই এক সদস্য গঙ্গার স্নান করার পথে এই মূর্তিকে দেখেন। তিনি সেখানে মা’কে প্রনাম করে বারি চলে যান। সেদিনই তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে মা চাইছেন তিনিই তাঁর পুজো করুন। সেই শুরু হয় জয়কালির আরাধনা। জঙ্গলে ভরা তৎকালীন কলকাতার থেকে সাড়ে তিনশো পেরিয়ে বর্তমানে নগর সভ্যতার সাক্ষী দেবী জয়কালি। অবিশ্বাস্য হলেও অত বছর আগে পাওয়া একটি মাটির মূর্তি এখনও অবিকল একরকম থেকে গিয়েছে। তাতে কোনও রকম হাত লাগাতেই হয়নি। বছর কেটেছে, ঘটমান বর্তমানে একই ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ‘ব্যোমকালী কলকাত্তেওয়ালি’।
ফল-মিষ্টি নয়, মুরগির ডিমে তুষ্ট হয়েছেন দেবী জয়কালী
Reviewed by Admin Amit
on
July 12, 2018
Rating:
No comments: