রথের রশি থেকে প্রবাদ প্রবচন, সবেতেই আছেন তিনি প্রভু জগন্নাথ। কিন্তু জানেন কি পুরীর মন্দিরে তাঁকে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে হল কেন ?
ওড়িশার সব মন্দিরেই কিন্তু জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রার এই রূপটিই পূজিত হয়। দেব বিগ্রহের এই অসম্পূর্ণ রূপের পিছনে আছে এক চমকপ্রদ কাহিনী।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর অভিলাষ হল‚ তাঁর কলিঙ্গ রাজ্যে ভগবান বিষ্ণুর মন্দির স্থাপিত হবে কিন্তু কেমন হবে আরাধ্য দেবতার রূপ ? নিরূপণে রাজা বসলেন কঠোর তপস্যায় তাঁর সাধনায় তুষ্ট হয়ে আবির্ভূত হলেন ভগবান বিষ্ণু।রাজাকে বললেন পুরীর অদূরে সমুদ্রে ভেসে আসবে এক নিমগাছের গুঁড়ি সেখান থেকেই বানাতে হবে তাঁর মূর্তি।
ইষ্টদেবতার নির্দেশমতো রাজা গেলেন সেই নির্দিষ্ট স্থানে, দেখলেন সত্যি সমুদ্রের জলে ভেসে এসেছে নিমগাছের গুঁড়ি।
রাজা নিযুক্ত করলেন রাজপ্রাসাদের খাসশিল্পীকে কিন্তু কিছুতেই সেই দারু থেকে রূপলাভ করে না দারুব্রহ্ম।যতবারই সেই গুঁড়ি কাটতে যায়‚ ভেঙে যায় অস্ত্র।
ইন্দ্রদ্যুম্ন পড়লেন মহা সমস্যায় এমন সময়ে তাঁর সামনে ছদ্মবেশে আবির্ভূত হলেন স্বর্গলোকের দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা । বললেন‚ তিনি তৈরি করবেন দেববিগ্রহ, কিন্তু তাঁর শর্ত আছে। তা হল‚ তিনি রুদ্ধদ্বার হয়ে মূর্তি বানাবেন দরজা বন্ধ থাকবে বাইরে থেকেই কিন্তু সেই দরজা একমাত্র তখনই খোলা যাবে যখন তিনি অভ্যন্তর থেকে বলবেন। যদি তার আগে দরজা খোলা হয় তবে যত অবধি কাজ হয়েছে তত পর্যন্তই থাকবে, তিনি এরপরে আর বানাবেন না ।
ইতস্তত করেও অপরিচিত শিল্পীর এই শর্তে রাজি হয়ে গেলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন । রাজপ্রাসাদের নির্দিষ্ট কক্ষে শুরু হল বিগ্রহ নির্মাণ এভাবে কেটে গেল একপক্ষকাল রাজা অতিকষ্টে দমন করলেন কৌতূহল। বহু ইচ্ছে সত্ত্বেও খুললেন না দরজা ।
একদিন সেই রুদ্ধদ্বারের এ পার থেকে আর কোনও শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না এ বার রাজার চিন্তার পারদ আরও ঊর্ধ্বমুখী তাতে ইন্ধন দিলেন রাজমহিষী গুন্ডিচ্চা । তাঁর অনুরোধে রাজা আর থাকতে পারলেন না সব নিষেধ অমান্য করে গিয়ে খুলে ফেললেন রুদ্ধদ্বার।
মুহূর্তের মধ্যে বুঝলেন কী ভুল করে ফেলেছেন। রাজাকে দেখামাত্র কাজ বন্ধ করে দিলেন বিশ্বকর্মা সামনে তখন দাঁড়িয়ে আছে তিন মূর্তি গাছের গুঁড়ি থেকে বানানো কিন্তু অসমাপ্ত বড় চোখ, নাসিকা-নির্মাণ অর্ধসমাপ্ত, নেই কান, হাত সবে তৈরি হতে শুরু করেছিল, নেই পদযুগলও।
এ বার বিশ্বকর্মা তাঁর প্রকৃত পরিচয় জানালেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে। জানালেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর আদেশে তিনি এসেছিলেন কিন্তু রাজা যেহেতু কৌতূহল নিরসন করতে না পেরে শর্তের খেলাপ করেছেন তিনি আর বিগ্রহ বানাবেন না এই বলে অদৃশ্য হয়ে গেলেন বিশ্বকর্মা ।
নিজের কৃতকর্মের জন্য বিলাপ করতে লাগলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তখন তাঁর সামনে আবির্ভূত হলেন ভগবান বিষ্ণু । জানালেন অনুশোচনা বা শোকবিলাপ না করতে। মন্দিরে স্থাপন করতে বললেন অসমাপ্ত তিন দেববিগ্রহকেই।
পুরী মন্দিরে সেই থেকে এই রূপেই পূজিত হচ্ছেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। ভারতবর্ষের অন্যান্য মন্দির যেখানে বিখ্যাত‚ কারুকার্যমণ্ডিত শৈল্পিক নিদর্শনের দেবমূর্তির জন্য‚ সেখানে শ্রীক্ষেত্র মহিমান্বিত হয়ে আছে অসমাপ্ত বিগ্রহেই।
পুরীর মন্দিরে কেন ‘ অসমাপ্ত ‘ রয়ে গেল জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ তৈরির কাজ ?
Reviewed by Admin Amit
on
January 23, 2018
Rating:
No comments: