শহর দুর্গাপুরের পার্শ্ববর্তী একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে নানা ধর্মীয় কাহিনী। সেগুলি বহু বছর ধরেই মানুষের মনকে নাড়া দেয়। তেমনই এক কালী মন্দির রয়েছে দুর্গাপুরের কাছেই অন্ডালের কাজোড়া এরিয়ার ঘনশ্যাম কোলিয়ারির বাবুইশোল এলাকায়। এখানকার কালী “খাদান কালী” নামেই বিখ্যাত। এর পেছনেও রয়েছে এক অদ্ভুত কাহিনী। সাল ১৯৬৮। ইসিএলের কাজোড়া এরিয়ার ঘনশ্যাম কোলিয়ারির বাবুইশোল ইউনিটে কয়লা বোঝাই একটি ট্রাক খনিগর্ভে পড়ে যায়। ট্রাকটি তুলতে ইসিএলের বড় বড় ক্রেন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যতবারই ট্রাকটি তুলতে যায় ততবারই ক্রেনের শেকল ছিঁড়ে যায়। কলকাতা থেকে ডুবুরি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়। খনির পাশেই ছিল ঝোঁপজঙ্গলে ঘেরা উঁচু ঢিপিতে মা কালীর এক বেদী। তৎকালীন ঘনশ্যাম কোলিয়ারির ম্যানেজার অমর ঘোষ কালী মায়ের কাছে মানত করেছিলেন ট্রাকটি উদ্ধার করার জন্য। এরপরে নাকি সহজেই ট্রাকটি উদ্ধার করা যায় খাদ থেকে। তখন থেকেই অখ্যাত এই জঙ্গল এলাকায় সেই কালীথান বিখ্যাত হয়ে ওঠে ‘খাদান কালী’ নামে।
ঝোঁপজঙ্গলে ঘেরা ওই উঁচু ঢিবিতে বেদী তৈরি করে কয়েকশো বছর ধরে স্থানীয় মতিলাল চক্রবর্তীর বংশধরেরা কালী মায়ের পুজো করতেন। অর্থাভাবে প্রতিমা তৈরি করতে পারেননি তাঁরা। তাই খোলা আকাশের নীচে বেদী তৈরি করে ছোট পাথরকে কালী রূপেই পুজো করতেন। ওই কালীস্থানের অন্ধ ভক্ত ছিলেন ইসিএলের ম্যানেজার অমর ঘোষ। কর্মস্থলে আসার আগে নিষ্ঠা সহকারে মায়ের পুজো দিতেন। সে সময়ে সামান্য বেতনে মন্দির তৈরী করে উঠতে পারেননি অমরবাবু। তখন মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। স্বপ্নাদেশেই বলা ছিল, মন্দিরের যেন কোনও ছাদ না থাকে। মায়ের স্বপ্নাদেশ মতো মন্দির তৈরির সাহায্যের জন্য অমর ঘোষ দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কিছু মুসলিম যুবক মন্দির তৈরির জন্য এগিয়ে আসেন। মন্দির তৈরির যাবতীয় খরচ বহন করেন তাঁরাই। মায়ের স্বপ্নাদেশ মতো মতিলাল চক্রবর্তীর প্রতিষ্ঠিত ঢিবিকে ঘিরে তৈরি হয় মন্দির। বেদীর চারদিক সাজানো হয় কলস দিয়ে। তার উপর দেওয়া হয় ত্রিশূল। তবে ওই বেদীটি দেখতে আজও কারবালা বেদীর মতো। এখানে দেবীর কোন মূর্তী নেই। পটের মধ্যে শ্যামবর্ণের কালী মূর্তী আঁকা। বহু দূরদূরান্ত থেকেও ভক্তরা আসেন এখানে পুজো দিতে।
অলৌকিক ঘটনার পটভূমিকায় গড়ে ওঠে বিখ্যাত খাদান কালী মন্দির
Reviewed by Admin Amit
on
June 23, 2018
Rating:
No comments: