বরাবরই একই পরিবারের শিল্পী প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন। এখনও দশমীর দিন কাঁধে করেই প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ে যাওয়া রীতি অটুট এই পরিবারে।
সাবেক বাংলার দুর্গোৎসবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িয়ে আছে চণ্ডীমণ্ডপ। কালক্রমে ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের প্রভাবে বিভিন্ন রাজপরিবারে, জমিদারবাড়ি বা বর্ধিষ্ণু পরিবারগুলিতে বিভিন্ন শৈলীর ঠাকুরদালান গড়ে ওঠায় ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকে বাংলার নিজস্ব চণ্ডীমণ্ডপ।
কালক্রমে টিকে থাকা দু’একটি চণ্ডীমণ্ডপ ধরে রেখেছে বাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য। যেমন হুগলি জেলার আঁটপুরের মিত্র পরিবারের সুবৃহৎ চণ্ডীমণ্ডপটি। স্থাপত্যটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংরক্ষিত হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত। কাঁঠাল কাঠের তৈরি মুল কাঠামোটির উপরে রয়েছে কারুভাস্কর্য। আজও আটচালাটির খড়ের চাল রয়েছে। ঠিক যেমনটা ছিল অতীতে। আর অতীতের গন্ধ মাখা সেই পুজোর আকর্ষণেই দূরদূরান্ত থেকে আজও ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।
এই পরিবারের অপর্ণা মিত্র বলছিলেন, পরিবারের আদি পুরুষ কন্দর্প মিত্র কোন্নগর থেকে হুগলি জেলার আঁটপুরে বসবাস শুরু করেন। তিনিই ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে পুজো শুরু করেন। আগে পুজো হত খড়ের চালের একটি ঘরে। পরে ১৭৪৭-এ আটচালাটি তৈরি হয়। কন্দর্প মিত্রের পৌত্র কৃষ্ণরাম মিত্র এই পরিবারের অন্যতম কৃতী পুরুষ। তিনি ছিলেন বর্ধমানের রাজার প্রতাপচাঁদ এবং উদয়চাঁদ মহতবের দেওয়ান। সেই সূত্রে জমিদারিও লাভ করেছিলেন। তাঁর সময় থেকেই এই পরিবারের পুজোর জৌলুস বাড়তে থাকে।
এ বার পুজোটি ৩৩৪ বছরে পদার্পণ করল। আগে আটচালাটির ঠিক সামনে কাঁঠালকাঠের একটি নাটমন্দির ছিল। এক সময়ে ঝড়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে একটি নাটমন্দির তৈরি করা হয়। কৃষ্ণরাম বাংলা ছাড়াও আরও সাতটি ভাষা জানতেন। প্রাচীর বেষ্টিত মিত্র বাড়ির পরিধির মধ্যে পাঁচটি শিব মন্দির, একটি রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ এবং আটচালাটির অবস্থান।
পুরনো প্রথা অনুসারে জন্মাষ্টমীর দিনে প্রতিমা নির্মাণের জন্য মাটি তোলা হয়। তবে এখানে কাঠামো পুজোর কোনও চল নেই। এক চালার সাবেক রীতির প্রতিমা। পরানো হয় ঐতিহ্যবাহী শোলার সাজ। শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে বোধনের মাধ্যেমে পুজোর সূচনা হয়। সে দিন থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতি দিন হয় চণ্ডীপাঠ। নবপত্রিকা স্নান করানো হয় কাছেই একটি বড় পুকুরে। কৃষ্ণরাম মিত্র তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি দেবোত্তর করে দিয়ে গিয়েছিলেন। পুজোয় ব্যয়ভার চলে দেবোত্তর এস্টেট থেকে। আজও অব্যাহত কুমারীপুজো ও কনকাঞ্জলি প্রথাটি।
এখনও পুজোর ক’দিন পরিবারের সদস্যরা দূর দূরান্ত থেকে আসেন এখানে। বরাবরই একই পরিবারের শিল্পী প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন। এখনও দশমীর দিন কাঁধে করেই প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ে যাওয়া রীতি অটুট এই পরিাবরে।
আঁটপুর মিত্র পরিবারের পুজো
Reviewed by Admin Amit
on
July 09, 2018
Rating:
No comments: